গাছ থেকে কাটিং সংগ্রহ করার বেলায় এই বিষয় গুলো মাথায় রাখতে হবেঃ
# গাছটি হেলদি কিনা। দুর্বল গাছের কাটিং বাঁচার সম্ভাবনা কম।
# গাছের উপরের দিক থেকে কাটিং নেয়া ভালো, যেহেতু গাছের ম্যাক্সিমাম এনার্জি উপরের দিকে থাকে।
# ডাল কাটার সময় সিকেচার / করাত ব্যাবহার করা উচিত। দাঁ দিয়ে কুপিয়ে ডাল সংগ্রহ করবেন না।
# কাটিং সংগ্রহের পর পানি দিয়ে ডাল হালকা ভিজিয়ে পলি ব্যাগে ভরে মুখ বেধে ফেলুন। বাড়ি নেয়ার সময়টায় ব্যাগের ভেতর আদ্রতা ধরে রাখবে।
# বাড়ি ফিরে ফেলে না রেখে, ভালো পানিতে ডালের গোড়াটা ভিজিয়ে রাখুন।
কাটিং সংগ্রহের পর করনীয়ঃ
কাটিং অনেকেরই মারা যায়। সব বাঁচবে ব্যাপারটা এমন না, তবে আমাদের চেস্টা করতে হবে যাতে সব বাঁচানো যায়। নিচের বিষয় গুলো মেনে কাটিং বা গাছ লাগালে আশা করি সফল হবেন আপনিও।
কেনো মারা যায়?
কাটিং মারা যাবার প্রধান কারণঃ গোড়া পচে যাওয়া। মাটিতে নানা ধরনের ফাঙ্গাস থাকে, তবে বেশির ভাগই নিস্ক্রিয় অবস্থায় থাকে। মাটি ঝুরঝুরা না হলে, পানি দেয়ার পর পানি জমে থাকে। এই জমে থাকা পানি মাটির নিস্ক্রিয় ফাঙ্গাসকে সক্রিয় করে দেয়। এই সক্রিয় ফাঙ্গাসের আক্রমনে কাটিং এর গোড়ায় পচন ধরে। গোড়া পচে গেলে বাকি অংশও মরে যেতে থাকে, কারন খাবার নিতে পারছে না উপরের অংশ।
আবার কাটিং এর উপরের দিক থেকেও শুকিয়ে কাটিং মারা যায়। এটা ঠেকানোর জন্য ডালের মাথায় পলি দিয়ে ঢেকে স্কচটেপ দিয়ে বেধে দিন।
ফাঙ্গাসের আক্রমন ঠেকানোর উপায়ঃ
ছত্রাক নাশক বা এন্টি ফাঙ্গাল ব্যাবহার করে সহজেই ফাঙ্গাসের আক্রমন ঠেকানো সম্ভব। কিছু এন্টি ফাঙ্গালের নামঃ অটোস্টিন, ম্যানসার, ইন্ডোফিল।
এন্টি ফাঙ্গালের ব্যাবহারঃ
প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম এন্টি ফাংগাল পাউডার গুলে নিবেন। ১০ লিটার পানি হলে ২০ গ্রাম। বোল বা বালতিতে পরিমান মতো এন্টি ফাঙ্গাল গুলে কাটিং এর গোড়াটা ভিজিয়ে রাখুন । কাটিং এর যতটুকু মাটির নিচে যাবে তার চেয়ে বেশি পরিমান অংশ পানির নিচে দিতে হবে। অন্তত ৪/৫ ঘন্টা ভেজানো অবস্থায় রাখবেন, বেশি রাখলেও ক্ষতি নেই। আমি ২ দিন পর্যন্ত ভিজিয়ে রেখে কাটিং লাগিয়েছি, টিকেছে।
কিভাবে লাগাবেনঃ
আগেই বলেছি মাটিতে নানা ধরনের ফাঙ্গাস থাকে। টানা কিছু দিন মাটি রোদে দিয়ে শুকিয়ে নিলে অনেক সমস্যাই কমে যায়। মাটিতে কাটিং লাগাতে চাইলে আগে মাটি রোদে দিয়ে শুকিয়ে নিন। মাটিতে লাল বালু মিশিয়ে নিতে পারেন। মাটির সাথে ১০% ভার্মি কম্পোস্ট মিশিয়ে নিন। কাটিং এর বেলায় নার্সারির গোবর না মেশানোই ভালো, কারন ওদের গোবর ১ বছরের পুরানো বা পঁচানো না।
মাটির মিশ্রনঃ ৫০% মাটি, ৪০% লাল বালু, ১০% ভার্মি কম্পোস্ট, লাল বালু না পেলে কোকো ডাস্ট দিন, ড্রেনেজ ভালো হবে।
তবে আমি কাটিং এর জন্য মাটি ব্যাবহার করি না সাধারণত। কোকো ডাস্ট বা নারকেলের ছোবড়ার গুড়া ব্যাবহার করি। কারন এটাতে ফাঙ্গাস থাকে না। আর কোকো ডাস্ট পানি ধরে রাখে দীর্ঘ সময়, এতে কাটিং এর গোড়া সবসময় আদ্র থাকে। যেহেতু ফাঙ্গাস থাকে না কোকো ডাস্টে, তাই কাটিং টেকার সম্ভাবনা বেশী, পানিও দ্রুত নেমে যায়।
কোকো ডাস্টের সাথে আমি ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার ব্যাবহার করি। এতে করে কাটিং টিকে গেলে ডাল পালা ছাড়তে সহজ হয়। কোকো ডাস্টের সাথে ১০% ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার মেশাতে পারেন।
কাটিং রোপন করা হয়ে গেলে ছায়াতে রেখে দিন, যেখানে আলো বাতাস চলাচল করে কিন্তু সরাসরি রোদ পড়ে না। ভালো হয় কোন গাছের নিচে ছায়াতে রেখে দিলে।
পানি দেয়াঃ
পটে মাটির পরিমান, কাটিং এর সাইজের উপরে অনেকটাই নির্ভর করে পানি দেয়ার রুটিন। তবে মাটিতে ময়েশ্চার থাকতে হবে সবসময়, বেশি ভেজাও না আবার শুকনোও না। তাই পটের উপরের দিকের মাটি শুকিয়ে যাবার আগেই পানি দিন, পানি জমে থাকা চলবে না। পানি দেয়ার কিছুক্ষনের ভেতর পানি নেমে যেতে হবে। মাটি দিয়ে রোপন করলে পানি নিস্কাসন নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়, এক্ষেত্রে, কোকো ডাস্ট খুব ভালো কাজ করে। পানি দেয়ার সাথে সাথে পানি নেমে যায়। এছাড়া কাটিং এ দৈনিক ২-৫ বার স্প্রে করে ভিজিয়ে দিলে ভালো হয়।
কখন রোদে দিবেনঃ
রোপনের পর ছায়াতে রেখে নিয়মিত যত্নের কিছুদিন পরেই কুশি দেখা দেয় । কুশি থেকে পাতা বের হবার পরে তাকে পরিণত হতে দিন। এর পরে গাছটিকে এমন জায়গায় রাখুন যেখানে শুধুমাত্র সকালের রোদ পায়। এমন জায়গা না থাকলে প্রতিদিন ২/১ ঘন্টার জন্য রোদে রেখে আবার ছায়ায় রেখে দিন। খুব সাবধানে, যাতে কাটিং নড়ে না যায়। এভাবে সপ্তাহ খানেক রোদের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়ে এর পরে পূর্ণ রোদের জন্য যে কোন স্থানে রেখে দিন। আপনার কাটিংটি এখন গাছ হয়ে গেছে!
সারাংশঃ
# কাটিং নিতে হবে হেলদি গাছ থেকে। বর্ষায় সব গাছই সতেজ থাকে, তাই বর্ষায় কাটিং সংগ্রহ করুন। অভিজ্ঞতা হয়ে গেলে যে কোন সময়েই পারবেন।
# কাটিং সংগ্রহের পর পানি ছিটিয়ে পলি ব্যাগে ভরে মুখ বেধে নিতে হবে।
# কাটিং এর মাথা পলি দিয়ে ঢেকে টেপ দিয়ে বেধে দিতে হবে।
# পানিতে এন্টি ফাঙ্গাল মিশিয়ে ৪/৫ ঘন্টা কাটিং এর গোড়াটা ভিজিয়ে রাখতে হবে।
# রোদে শুকানো ঝুরঝুরা মাটিতে বা কোকো ডাস্ট দিয়ে কাটিং রোপন করতে হবে।
# নিয়মিত পানি দিন, মাঝে মাঝে স্প্রে করে কাটিং এর পুরোটা ভিজিয়ে দিন।
# কাটিং লাগিয়ে পট নাড়াচাড়া করা যাবে না। এক জায়গায় রেখে দিন। পট নাড়াচাড়ার সময় কাটিং এর গোড়া নড়ে গেলে সেটা বাচানো কঠিন।