হাসনাহেনার ঘ্রাণে কি সত্যিই সাপ ছুটে আসে ?

লোক গল্পে আছে সাপ হাসনাহেনা বা সুগন্ধি ফুলের গন্ধে বিমোহিত হয়ে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে। আসলে সাপের ঘ্রাণ শক্তি অত্যন্ত ক্ষীণ বা দুর্বল। হাসনাহেনা কিংবা কোনো সুগন্ধি ফুলের গন্ধে মোহিত হওয়ার মতো ঘ্রাণ শক্তি সাপেদের নেই। সাপেদের এই ইন্দ্রিয় শক্তি নিয়েই আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে নানা লোক গল্প।

সাপ আসতেই পারে, তবে ফুলের গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে আসার কোনো কারণই নেই। সাপের নাক নেই। গন্ধ বোঝার জন্য এরা জিহ্বা ব্যবহার করে। তবুও ফুলের গন্ধে আকৃষ্ট হওয়ার কোনো বৈজ্ঞানিক কারণ সাপের জন্য নেই। সাপ আসে তার পেট পূর্তির জন্য।

সাদা রঙের সুগন্ধি ফুলগুলো সাধারণত রাতেই ফোটে। এদের পরাগায়ণ হয় কীটপতঙ্গের মাধ্যমে। অর্থাৎ হাসনাহেনা ফুলের সুগন্ধে কীটপতঙ্গ আকৃষ্ট হয়, এরা এসে ফুলের পরাগায়ন ঘটায়। অন্যদিকে এই কীটপতঙ্গই আবার কিছু শিকারি প্রাণীদের আকৃষ্ট করে। কুনোব্যাঙ, মাকড়সা, টিকটিকি, গিরগিটি। এসব প্রাণীগুলো আসে পোকা খেতে। এদের আকর্ষণে আবার ছুটে আসে সাপ। টিকিটিকি, গিরিগিটি কিংবা ব্যাঙ সাপের প্রিয় খাবার।

 আরও পড়ুনঃ জবা ফুলের উপকারিতা | জবা ফুলের ব্যবহার

রাতে খাবারের তালাশে বেরোয় যেসব সব সাপ, তারা যদি কখোনো হাসনাহেনা ফুল গাছের আশপাশে আসে, দেখবে তাদের জন্য খাবারের মেলা বসেছে। সুতরাং দুয়েকটা টিকিটিক-গিরগিটি কিংবা ব্যাঙ শিকার করতে পারলে মন্দ কী?

সাপ তার শিকার ধরে, উদরপূর্তি করে। সাপ সাধারণ শিকার করা পর সুযোগ পেলে কোথাও বিশ্রাম নেয়। কারণ, এরা শিকারকে আস্ত গিলে খায়। সেই খাবার হজম হতে সময়ের দরকার হয়। দরকার কিছুক্ষণ নিরবিচ্ছিন্ন বিশ্রামেরও। হাসনাহেনা গাছ সাপের বিশ্রামের জন্য আদর্শ জায়গা। 

হাসনাহেনার ডালগুলো সাধারণ বৃক্ষের মতো শক্তপোক্ত নয়, অনেকটা লতার মতো হেলেপড়া ভাব আছে। তাই হাসাহেনার ডালগুলো ঝোপালো হয়ে মটিতে বিছিয়ে থাকে। সুতরাং গাছের গোড়াটা দুর্ভেদ্য হয়ে ওঠে অনেকটা। সাপের বিশ্রামের জন্য আদর্শ জায়গা।

সুতরাং, যাঁরা বলেন হাসনাহেনা ফুল গাছের নিচে সাপ দেখেছেন, তাদের কথা মিথ্যে নয়। কিন্তু সাপ সেখানে ফুলের গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে আসেনি।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *