ছেঁড়াদ্বীপ, সেন্টমার্টিন

প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ছেঁড়া দ্বীপ অবস্থিত । ছেঁড়া দ্বীপ (Chera Dwip) বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের ভূখন্ড । স্থানীয় মানুষের কাছে দ্বীপটি ‘ছেঁড়াদিয়া’ বা ‘সিরাদিয়া’ নামে পরিচিত। ছেঁড়া দ্বীপ সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পাথর, প্রবাল এবং নারিকেল গাছে পরিপূর্ণ। জোয়ারের সময় ছেঁড়া দ্বীপের এক-তৃতীয়াংশ সাগরের পানির নিচে তলিয়ে যায়। সাগরের নীল ঢেউ যখন পাথরের গায়ে আঁচড়ে পরে তখন এক মোহনীয় দৃশ্যের অবতারণা হয়।

নীল সাগর, আকাশ আর সূর্যাস্তের মিতালী দেখতে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ছেঁড়া দ্বীপে বেড়াতে আসে।

কিভাবে ছেঁড়া দ্বীপ যাবেন ?

ঢাকা থেকে টেকনাফঃ ছেঁড়া দ্বীপ যেতে হলে আপনাকে প্রথমে টেকনাফে আসতে হবে। ঢাকা থেকে বিভিন্ন বাসে করে সরাসরি টেকনাফে যাওয়া যায়। ঢাকার ফকিরাপুল, আব্দুল্লাহপুর, গাবতলী ও সায়েদাবাদ থেকে টেকনাফ যাওয়ার জন্য লন্ডন এক্সপ্রেস,সেন্টমার্টিন পরিবহন, শ্যামলী, ঈগল, মডার্ন লাইন, গ্রীন লাইন, এস আলম ইত্যাদি বাস পাবেন। বাস ভাড়া সার্ভিসের ধরণভেদে সাধারণত ১০৫০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। টেকনাফ পৌঁছাতে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা সময় লাগে।

ঢাকা থেকে কক্সবাজার: ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত এসে, সময় সুযোগ মত অন্য বাসে টেকনাফ যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে ৯০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে অনেক বাস কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এছাড়া ঢাকা থেকে বিমানে করেও কক্সবাজার আসতে পারবেন।

ট্রেনে ঢাকা থেকে কক্সবাজার: ট্রেনে করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসতে সোনার বাংলা, তূর্ণা-নিশীথা, সুবর্ন এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতী/গোধূলী, চট্টলা মেইল ট্রেনে করে নিজের সুবিধামত যাত্রা করতে পারেন। এরপর চট্টগ্রামের বহদ্দার হাট কিংবা নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে চড়ে বসুন কক্সবাজারের গাড়ীতে। ভালো সার্ভিস পেতে এস আলম, সৌদিয়া, ইউনিক ইত্যাদি বাসে ভ্রমণ করতে পারেন।

কক্সবাজার থেকে টেকনাফ: কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যেতে বিভিন্ন লোকাল বাস বা মাইক্রো/জিপ পাবেন। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যেতে সাধারণত অবস্থার উপর নির্ভর করে দেড় থেকে দুই ঘন্টা সময় লাগে।

টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন: টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে প্রতিদিন সকাল থেকে আসা-যাওয়া করে কুতুবদিয়া, কেয়ারী সিন্দাবাদ, ঈগল, সুন্দরবন ইত্যাদি জাহাজ। এছাড়াও এই সমুদ্র রুটে বেশ কিছু ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচল করে। জাহাজে করে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যেতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা থেকে আড়াই ঘন্টা। জাহাজের শ্রেনীভেদে আপ-ডাউন ভাড়া ৫৫০-৮০০ টাকার মত। জেটি ঘাট থেকে প্রতিদিন জাহাজগুলো সকাল ৯ টা থেকে ১০ টার মধ্যে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং সেন্টমার্টিন থেকে ফেরত আসে বিকাল ৩.০০-৩.৩০ মিনিটে। তাই সময়ের আগে জেটি ঘাটে উপস্থিত না হতে পারলে জাহাজ মিস হবার সম্ভাবনা বাড়ে। আর যারা সেন্টমার্টিনে রাত্রি যাপন করেন তাঁরা পরের দিন জাহাজে ফেরার সুযোগ পান যা পূর্বেই টিকিটে উল্লেখ থাকে।

সধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ এই পাঁচ মাস জাহাজ চলে। তাই বছরের অন্য সময়ে সেন্টমার্টিন গেলে ট্রলার কিংবা স্পিডবোট ভাড়া করে যেতে হবে। শীত মৌসূম ছাড়া বাকি সময় সাগর উত্তাল থাকে, তাই এই সময়ে ট্রলার কিংবা স্পিডবোট ভ্রমণ নিরাপদ নয়। যদিও আপনি এ্যাডভেঞ্জার প্রিয় হলে উত্তাল সাগরে ট্রলার যোগে ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিতে পারেন।

সেন্টমার্টিন থেকে ছেঁড়া দ্বীপ: সেন্টমার্টিনের জেটি থেকে ছেঁড়া দ্বীপ যাওয়ার স্পীড বোট ও ইঞ্জিন চালিত ট্রলার পাওয়া যায়। ছেঁড়া দ্বীপ যাওয়ার ভাড়া সাধারণত সিজনের উপর নির্ভর করে। পর্যটনের মৌসুমভেদে জনপ্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকায় ছেঁড়া দ্বীপ থেকে ঘুরে আসতে পারবেন। আর যদি হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকে তবে জোয়ার ভাটার সময় জেনে পায়ে হেঁটে কিংবা সাইকেল ভাড়া বা অটোরিক্সা ভাড়া নিয়ে ছেঁড়া দ্বীপ থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেন।

কি খাবেন কোথায় খাবেন ?

দুই-তিনটি চায়ের দোকান ও ডাব, তরমুজ ছাড়া ছেঁড়া দ্বীপে আর তেমন কিছুই নেই। এখানে কিছু খেতে চাইলে আপনাকে সাথে খাবার পরিবহন করতে হবে। এছাড়া সেন্টমার্টিনে ফিরে গিয়ে খাবার খেতে পারেন।

আরও পড়ুন

কেয়ারি সিন্দাবাদ : বুকিং ও ভাড়া বিস্তারিত

শেয়ার করুন সবার সাথে

দৃষ্টি আকর্ষণযে কোন পর্যটন স্থান আমাদের সম্পদ, আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন, অন্যদেরকেও উৎসাহিত করুন। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।

সতর্কতাঃ হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই এই পেজে প্রকাশিত তথ্য বর্তমানের সাথে মিল না থাকতে পারে। তাই অনুগ্রহ করে আপনি কোথায় ভ্রমণে যাওয়ার আগে বর্তমান ভাড়া ও খরচের তথ্য জেনে পরিকল্পনা করবেন। এছাড়া আপনাদের সুবিধার জন্যে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ও নানা রকম যোগাযোগ এর মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়। এসব নাম্বারে কোনরূপ আর্থিক লেনদেনের আগে যাচাই করার অনুরোধ করা হলো। কোন আর্থিক ক্ষতি বা কোন প্রকার সমস্যা হলে তার জন্যে লেখক দায়ী থাকবে না।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *